একক ইশ্তাহার
টীকা ও দিনলিপি
prophase:
অতলায়ন ও উদ্ধার
সিক্ত সত্তায় শরীরের আধখানা খামচে ধরেছিলো মৃত্তিকার অনাকার, আর বাকি অংশ বোধহয় তখনো জলে জিয়নকাঠির ল্যাজা। নীল আনীল জন্মের জল। মাতৃগর্ভের। অনেক পরে সেই মুহূর্তের যতোটা মনে পড়ে, নিজেকে ভেবেছিলাম উভচর। পুনঃসৃষ্ট এক উভচর প্রাণ। এরও মাসকতক পর মনে পড়েছিলো অ্যামীবার কথা। আর তার জীবনচক্র।
~ * ~ * ~
নতুন নরমের কোলে, ফিরে পাওয়া মৃত্তিকায় উঠে কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম আমি? নাকি কতদিন? জানিনা। আমার কালবোধি লুপ্ত হয়ে যায়। জ্ঞানের সাথে ফিরে আসে খিদে – তীব্র, তামসিক প্রদেশ থেকে বেরিয়ে আসা এক উদগ্র খিদে। আর তার সাথে আরো অনেকানেক লুপ্ত জ্ঞান। প্রমোদতরীর নাম মনে ছিলো না। তার ভেঙে পড়ার সময় ও স্মৃতি। ডুবের যাবার অনুভূতি, যে জল জলদস্যু, তার সাথে সংগ্রামের উপাখ্যান আজও মনে পড়েনি। নবজন্মের ভেজা গায়ে শুয়ে শুয়ে দেখলাম দিকশূন্য নীলাকাশ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ভেজা মাটি, কর্দমাক্ত প্রেম; লিরিকের শূন্য শূন্য সব দিকবিদিক। তারপর কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়ে পায়ের ব্যবহার পেলাম। যেন এই প্রথম। দূরে তাকিয়ে দেখলাম আরো কয়েকটা দ্বীপ। মনে এসে গেলো ‘দ্বীপ’ শব্দটা। মনে পড়লো ভাষা, বাংলা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, গণিত। মনে পড়লো কত কবিতা। আদুর, অবোধ বাংলা ভাষায় লেখা। এ সবই হয়তো আমার কবিতা। বুঝতে পারলাম আমি কবিতা লিখতাম, বাংলা জানি, শুধু জানিনা আমি কে। আমি কোথায়? আমি কেন?
~ * ~ * ~
ওদিকে যে দ্বীপান্তর, সেখানকার হাসপাতাল আমাকে ক্রুজ শিপের নাম বললো প্রথম – unspoken aim – অব্যক্ত লক্ষ্য। তারাই জানালেন কীভাবে ঝড়বাতাস বয়েছিলো, আচমকা ডুবে গিয়েছিলো সূর্্য, আর সে অকপট সূর্যাস্তের টানে এঞ্জিনের গোলোযোগে ডুবোপাহাড় বাঁচাতে না পেরে কীভাবে কীভাবে অব্যক্ত লক্ষ্য... কীভাবে সাহায্য আসতে পারেনি ঘড়ি ধরে, কীভাবে... আরো কতরকম কীভাবে... আমার শুধু মনে আছে কাদার নবজন্মে, নবজ্ঞানের পর সেই খিদের কথা। এক মুহূর্ত, যার পূর্বজ নেই, পশ্চাত নেই। কাদার মধ্যে খপ করে দু একটা শ্লথ শামুক। সাগরজলে ধুয়ে কাঁচা খেয়ে নিলাম। আশ্চর্য আমার ধুয়ে খাবার কথা মনে ছিলো, মনে ছিলো সাগর নোনতা, উদয়ের দিশা পূর্ব, অস্তগামীর পশ্চিম, আমার মনে ছিলো এই সমস্ত সমস্ত বাংলাভাষার অপরূপ শব্দধ্বনিযতি। শুধু আমার নিজের নাম মনে পড়লোনা। আজকেও না।
~ * ~ * ~
যেখানে দাঁড়িয়ে শামুক খেলাম তার কাছের গাছ থেকে উড়ে গেলো এক অনন্যা নীলকন্ঠ। কাছে গিয়ে দেখলাম বাদামগাছ। পরে জানলাম ওগুলো পাইন নাট্। তাকে ঝাঁকাতেই মাটিতে মুঠো মুঠো মুক্তদানা, যাদের আর কোনো দাবিদার নেই। আমি একা। আমার একাকী। খেলাম, আর আঁজলা ভরে আউন্স আউন্স সাগরের জল। কী আশ্চর্য! আমার আউন্স-লিটারের সম্পর্ক পর্যন্ত মনে ছিলো, আরো কত সম্পর্কের কথা। এরপর আমার তোড়ে প্রস্রাবচাপ এলো। কাদামাখা প্যান্ট শুকিয়ে গিয়েছিলো। খুলে বিয়োগ করে হঠাৎ শিশ্ন ভীষণ শক্ত হলো। অচেনা শূন্য উদ্দেশ্যে। এরপর কাম এলো। আশরীর তাড়িত এক। ‘কাম’ এর পরের শব্দটা মনে পড়লো – ‘কাল’। ভেজা তর্জনী দিয়ে বেলাভূমির নরম পুলটিসে একে একে লিখলাম – কাম, কাল, শামুক, বাদাম, জল, গাছ, নুন, সীমান্ত, গগন... বসুন্ধরা।
~ * ~ * ~